অপ্রত্যাশিত চিঠি – পর্ব ৭/৮

অপ্রত্যাশিত চিঠি
-রুদ্র প্রসাদ

 

 

ষষ্ঠ পর্বের পর…….

( ২৪ )

কিছুটা আসার পর রাস্তার মোড় ঘুরতেই কালচে গাড়িটা দৃষ্টিগোচর হল । পুলিশের সাইরেন শুনে পালাবার চেষ্টা না করে, রাস্তার একপাশে থেমে গেল গাড়িটা । পুরো ব্যাপারটা একটু গোলমেলে লাগল ! কিন্তু ঘোর কাটতে সময় লাগল না । গতি কমিয়ে পুলিশের গাড়িটা আর একটু কাছাকাছি হতেই আমাদের লক্ষ্য করে একঝাঁক বুলেট ছুটে এলো । সেনগুপ্ত সাহেব আর দুই কনস্টেবল জবাবে এক রাউণ্ড করে গুলি চালাতেই বললাম, “ওদের সঙ্গে দাদু আছেন, বি কেয়ারফুল” । “হুঁ”, বলেই সেনগুপ্ত সাহেব চাপা গলায় বললেন, “স্টপ ফায়ারিং”। তারপর নির্দেশ দিতেই ড্রাইভার গাড়িটাকে আড়াআড়িভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিল । দুটো গাড়ির মাঝে ব্যবধান প্রায় পঁচিশ গজ মতো হবে ।
এরপর বেশ কিছু সময় চুপচাপ কাটল । এক একটা মুহূর্ত যেন এক একটা প্রহরের সমান বলে মতো হচ্ছিল । এমন সময় আমদের সামনের দিক থেকে আরও একটা পুলিশের সাইরেন শোনা গেল । সেনগুপ্ত সাহেবকে অস্ফুটে বলতে শুনলাম, “এবার ? পালাবি কোথায় ? যা দেখি, কেমন করে পারিস”। সামনের গাড়িটা থেকে আবার গুলি চলল, এবার উল্টোদিকে । তারপর আবার বিরতি । একটু পরে সামনে গাড়ির একটা দরজা খুলে গেল । আগে দাদুকে ঠেলে নামিয়ে দিয়ে পেছন পেছন নামল পালের গোদা লোকটা । নেমেই দাদুর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হেঁকে বলে উঠল, “আমাদেরকে যেতে না দিলে এই বুড়োর পরিনতির জন্য আমরা দায়ী থাকব না”। আমাদের গাড়ির হেডলাইটের আলোয় লোকটাকে ভালো করে দেখতেই বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে গেল, “আরে ! এ যে …”, নিজের অজান্তেই গলা থেকে কথা গুলো বেরিয়ে এলো । এ তো সেই লোকটা, যে প্রথমদিন টোটোতে করে আসার সময় আমার সঙ্গেই ছিল ! দাদুর বাড়ি যাওয়ার পথও বাতলে দিয়েছিল ! এই জন্যই একে এতো চেনা চেনা লাগছিল । অবশ্য এখনকার মতো চোখে-মুখে হিংস্রতা আর শয়তানি ক্রূরতা সেদিন দেখি নি ।

( ২৫ )

কি করা যায় ভাবছি, এমন সময়, হঠাৎ দেখি উল্টোদিকের দরজা খুলে আরও একজন নেমে পড়েছে । কিন্তু এ কি ! একে যে অবিকল দাদুর মতোই দেখতে ! চোখে ভুল দেখছি বলে মনে হল । একটু চোখ রগড়ে দেখলাম, নাহ্, দেখার ভুল নয় । সেনগুপ্ত সাহেবও কম অবাক হন নি । দুজনকেই একেবারে এক রকম দেখতে ! কে আসল আর কে নকল, বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম । হঠাৎ দেখি সেনগুপ্ত সাহেব দরজা খুলে গাড়ি থেকে নামলেন, নেমে গলা তুলে বললেন, “পালাবার কোনো পথ নেই । বাঁচতে চাইলে সারেণ্ডার কর”। দেখে আমিও অন্যপাশ দিয়ে এই ফাঁকে নেমে পড়েছি । বেশ বুঝতে পারছি, তৃতীয় ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামার ফলে বন্দুকধারী কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছে । সুযোগটা কাজে লাগানোর তাল খুঁজছি, এমন সময় হঠাৎ দেখি তৃতীয় ব্যক্তি আমাদের দিকে দৌড়তে আরম্ভ করেছে । আমিও এই সুযোগ দেখে, রাস্তা থেকে একটা বড় পাথরের টুকরো কুড়িয়ে, সজোরে ছুঁড়ে মারলাম বন্দুকধারীর মাথা লক্ষ্য করে । এবার আর কোনো ভুল-চুক হয়নি, ঠিক লেগেছে ডান চোখের পাশে । লোকটাকে একপাশে পড়ে যেতে দেখলাম, ঠিক তখনই হঠাৎ একটা গুলির আওয়াজ হল । দেখলাম, আমাদের দিকে দৌড়ে আসা লোকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে আর সামনের গাড়ির ভেতর থেকে একটা রিভলবারের নল দেখা যাচ্ছে । এবার গর্জে উঠল সেনগুপ্ত সাহেবের পুলিশ স্পেশাল, অব্যর্থ নিশানা । কোথায় লাগল বুঝতে পারলাম না বটে, তবে একজনকে ওপাশের দরজা খুলে, মাটিতে পড়ে যেতে দেখলাম । এই সব দেখতে দেখতে, উত্তেজনার বশে কখন যে গাড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছি, খেয়াল নেই । হঠাৎ আবার একটা গুলির শব্দ আর সাথে সাথে এক প্রচণ্ড ধাক্কায়, রাস্তার ওপর ছিটকে পড়লাম । বামদিকে তীব্র যন্ত্রণার সাথে সাথে মনে হল, সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে, চোখে নেমে আসছে জমাট অন্ধকার ।

( ২৬ )

চোখ খুলে বুঝতে পারলাম না কোথায়, কি অবস্থায় আছি । নড়াচড়া করতে গিয়ে বুঝলাম সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা । গায়ে যেন একটুও জোর নেই । কোথায় এলাম ভাবতে ভাবতেই দেখি, সামনে একজন দশাসই মহিলা, পরনের পোশাক দেখে নার্স বলে মনে হল । আমাকে নড়তে দেখেই খসখসে গলায় হুকুম জারি করল, “জ্ঞান ফিরেছে বলেই বেশি নড়াচড়া করবেন না । একটু পরেই ডাক্তারবাবু আসবেন । এখন চুপচাপ শুয়ে থাকুন”। অগত্যা শুয়ে শুয়েই চারপাশে চোখ বোলাতে লাগলাম, সব দেখে জায়গাটাকে কোনো হাসপাতালের কেবিন বলে মনে হল । ঘরের ভেতর একটা টিউবলাইট জ্বলছে, কিন্তু ঘড়ি না থাকায় সময় বোঝা গেল না । নার্সের তুরীয় মেজাজ দেখে প্রশ্ন করতেও ভরসা হল না । শুয়ে শুয়ে আকাশপাতাল ভাবছিলাম ।
একটু পরে একজন বয়স্ক অমায়িক ভদ্রলোক এলেন, গলায় স্টেথোস্কোপ আর গায়ে অ্যাপ্রন দেখে বুঝলাম ইনিই ডাক্তারবাবু । মৃদু হেসে বললেন, “গুড ইভিনিং ইয়ংম্যান, এখন কেমন …”। বললাম, “মোটামুটি ঠিকই আছি, তবে ভীষণ দুর্বল আর গায়ে খুব ব্যথা”। শুনে উনি বললেন, “চিন্তার কিছু নেই, গুলিটা কাঁধ ছুঁয়ে চলে গেছে । এখানে আনতে দেরী হয়েছে । অতিরিক্ত ব্লিডিংয়ের জন্যই এতো দুর্বল লাগছে । ডোন্ট ওয়্যারি, ও দু-দিনেই ঠিক হয়ে যাবে”। বিশ্রাম নিতে বলে ডাক্তারবাবু চলে গেলেন ।
একটু পরে আর একজন কমবয়সী ডাক্তার এসে ড্রেসিং করে নতুন ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন । জিজ্ঞাসা করে জানলাম তাঁর নাম নীলোৎপল বাবু, প্রায় আমার মতোই বয়স হবে বলে মনে হল । তাঁকে বলে নিজের মোবাইল দুটো ফেরত পেলাম, একটা চার্জারও জোগাড় হল । ফোন অন করতেই দেখি একগাদা মিসড্ কল, শুধু মায়েরই সাতাশটা । বুঝলাম, অবধারিতভাবে কপালে ফুল-চন্দন অপেক্ষা করছে । মনে মনে একটা গল্প বানিয়ে, একটু ভয়ে ভয়েই মাকে ফোন করলাম । আওয়াজ শুনেই বোঝা গেল, মেজাজ সপ্তমে, কিন্তু সব খুলে বলার তো উপায় নেই, কি আর করা যাবে ! একঝুড়ি মিথ্যা বলে এ যাত্রায় আপাতত রেহাই জুটল । আরও কিছু ফোন আর মেসেজ করে ফেসবুকে ঢুকতে যাব, এমন সময় সেই নার্স রাতের খাবার নিয়ে হাজির হল । স্বাদ-গন্ধহীন খাওয়ারগুলো কোনোক্রমে গলাধঃকরণ করার পর গুচ্ছের ঔষধ গিলে তবে ছাড়া পাওয়া গেল ।
খাওয়া-দাওয়ার পর, হঠাৎ করে রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে যেতেই একরাশ দুশ্চিন্তা এসে মাথায় ভীড় করে এলো । এতো সময় যে কেন মনে পড়েনি, ভেবেই আশ্চর্য হলাম । খানিকক্ষণ পর নীলোৎপল বাবু রাউণ্ডে এলেন । তাড়াতাড়ি করে “দাদু, হরিদাদু, রাই – এরা সব কোথায় ? সবাই কেমন আছে ? কি হল, শেষ পর্যন্ত …”, ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করতেই হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “সবাই মোটামুটি ভালো আছেন । কোনোরকম বিপদের আশঙ্কা নেই । তবে আপনার চোটটাই গুরুতর, শরীর এখনও বেশ দুর্বল । আর জেগে না থেকে, ঘুমিয়ে পড়ুন । বিশ্রাম নিলে দ্রুত সেরে উঠবেন । আর কালকে, সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত সাহেব আসবেন, এলো আপনি কথা বলে নেবেন । ঠিক আছে ? গুড নাইট”, বলেই চলে গেলেন । পুরো ঘটনাগুলো ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লাম ।

( ২৭ )

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর একপ্রস্থ ড্রেসিং আর জলখাবার সহযোগে অনেকগুলো ঔষধ গেলার পর মোবাইলটা নাড়া-চাড়া করছিলাম,এমন সময় সেই বয়স্ক ডাক্তারবাবু এলেন, সাথে সেনগুপ্ত সাহেব আর রাই । রাইকে পুরোদস্তুর ফর্মাল ড্রেসে একদম স্বাভাবিকভাবে আসতে দেখে একটু অবাক লাগল । অভিব্যক্তি যেন গম্ভীর বলেও মনে হল । সেনগুপ্ত সাহেব একটু হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “কি …, এখন কেমন আছ ?” প্রত্তুত্তরে হেসে বললাম, “আগের চেয়ে অনেকটা ভালো । তবে বেশ কিছু প্রশ্ন আছে”। কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে, রাইকে দেখিয়ে বললেন, “এঁর সাথে আলাপ করিয়ে দেই । ইনি মিস্ ঋষাণী ঘোষ, স্পেশাল অফিসার, এন.সি.বি.”। কিছু না বলে তাকিয়ে থাকতে দেখে শান্তভাবে, “রাই আমার ডাকনাম, আন্ডার-কভার অপারেশনের জন্যই নাম, ডেজিংনেশন ইত্যাদি বলা সম্ভব হয় নি”, বললেন নবরূপে সদ্যচেনা ঋষাণী ম্যাডাম । সামলে নিয়ে বললাম, “ইটস্ ওকে, কোয়াইট আন্ডারস্ট্যান্ডেবল্, তবে তার মানে, ঐ বাড়িতে ঢোকার পর থেকে সন্দেহভাজনদের তালিকায় আমিও ছিলাম”। উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলেন ঘোষ ম্যাডাম । এবার ডাক্তারবাবু বললেন, “আপনারা কথা বলুন, আমি রাউন্ড দিয়ে আসছি”।
ডাক্তারবাবু চলে যাওয়ার পর সেনগুপ্ত সাহেব বলতে শুরু করলেন, আমিও মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছিলাম । জানা গেল, পুরোটাই পুলিশ – এন.সি.বি. জয়েন্ট অপারেশন ছিল । এখানকার মোটামুটি সকলেই ধরা পড়েছে, আরও কেউ জড়িত আছে কি না জানার জন্য তল্লাশি চলছে ।
পুরো ঘটনায় দাদু খুব শক পেয়েছেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার জন্য তাঁর বয়ান এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি ।
আমি যাদের মেরেছিলাম, তাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাকে কোলকাতা পাঠানো হয়েছে ।
দাদুর মতো দেখতে যে লোকটার গুলি লেগেছিল, সে একজন সখের অভিনেতা । তার নাম শশধর, যাত্রাপালায় অভিনয় করত । অতিরিক্ত পয়সার লোভে এদের সঙ্গে এসে জুড়ে গিয়েছিল । বাইরের কোনো লোকের সামনে সে দাদু সেজে অভিনয় করত । হুবহু এক রকম দেখতে না হলেও মেকআপ করে ম্যানেজ করে নিতে পারত । এখন আপাতত পুরো ঘটনার রাজসাক্ষী হতে সম্মত হয়েছে ।
আর যে লোকটা প্রথমদিন হিতৈষী সেজে আমাকে দাদুর বাড়ি যাওয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, তাকেই আপাতত এখানকার দলের মাথা বলে মনে করা হচ্ছে । তবে তার ওপরেও কেউ আছে কি না, সে ব্যাপারে তল্লাশি জারি রয়েছে । লোকটার সঠিক পরিচয় এখনও জানা যায় নি । নাম ভাঁড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় বলে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত । তবে যা প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে জানা যায় লোকটা এক আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানকারী দলের সঙ্গে যুক্ত । আগে খিদিরপুর অঞ্চলে এই সব কুকাজই করে বেড়াত, ইদানীং পুলিশের তাড়া খেয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এসে বোধহয় এখানে আস্তানা গেড়েছিল । এরা চারাগাছের টব আর প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটের আড়ালে মাদক পাচার করত । জলপথে এদের সরবরাহ আসত, আর এখান থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ত ।
দাদুকে অন্ধকারে রেখে শুরু করলেও, দাদু ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিলেন । এদের কার্যকলাপের প্রমাণ হিসেবে এদের কনসাইনমেন্টের একটা প্যাকেট সরিয়েও ফেলেছিলেন । ঘোষ ম্যাডাম জানালেন যে প্যাকেটটা দেখতে ছোটোখাটো হলেও বাজারে ওর দাম কয়েক কোটি টাকা । কিন্তু দাদুর এই কাজটা ওদের নজরে আসতেই ওরা দাদুকে বন্দী করে । দাদুকে চাপ দিয়ে প্যাকেটটা হাতিয়ে নিয়ে দাদুকেই মেরে ফেলার প্ল্যান ছিল ওদের ।
রতন একটা ভাড়াটে খুনে গুণ্ডা, ওর নামে পুলিশের খাতায় বেশ কয়েকটা কেস রয়েছে । দাদুকে ভয় দেখানো, গা-জোয়ারী আর জুলুমবাজির কাজটা সেই করত ।
আবীর হিসেব রাখার কাজ করত । কোথায় কোথায় কত পরিমাণ সাপ্লাই দেওয়া হল, কোথা থেকে কত অর্ডার এলো ইত্যাদি ।
আর হরিদাদুর কাটারীর কোপে যে কমবয়সী ছেলেটা মারা গেছে, তার নাম সমীর । হরিদাদুর নাতি । অল্পবয়সেই বখে গিয়েছিল । কিন্তু পড়াশোনায় জলাঞ্জলী দিয়ে কিভাবে এদের দলে ভিড়ল, তা এখনও জানা যায় নি । তবে এর হাত ধরেই এখানকার আড্ডা গড়ে উঠেছিল । সমুদ্রতটের লাগোয়া, নির্জন আর বর্ডার কাছে হওয়ার জন্যই এই জায়গাটা বেছে ওরা ঘাঁটি গেড়ে বসার প্ল্যান করছিল । পরে এরা দুজন বয়স্ক মানুষকে সরিয়ে দিয়ে পুরো জায়গা দখলের চিন্তাও করেছিল । প্রথমে সমীরকে সামনে রেখে ব্ল্যাকমেল করে, পরে ভয় দেখিয়ে এরা এখানে জাঁকিয়ে বসার ধান্দায় ছিল । কিন্তু মাঝখান থেকে আমি এসে পড়ায় এদের সব পরিকল্পনা বানচাল হয়ে গেছে ।
এই এক নাতি ছাড়া, হরিদাদুর তিনকুলে কেউ নেই । স্ত্রী বিয়োগের পর ছেলে-বৌমাকেও হারাতে হয়েছে । এখন নাতির এই করুণ পরিণতিতে তীব্র অনুশোচনায় দগ্ধ ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকার জন্য গত রাতে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল । এখন আপাতত কাউন্সেলিং চলছে ।
বেশ কিছু সময় ধরেই ঘোষ ম্যাডাম এই দলটার ওপর নজর রাখছিলেন । পর্যটক সেজে ওদের সকলের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন । কিন্তু খদ্দের সেজে পিছু নিতে গিয়েই ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি । যদিও তাঁর পরিচয় ওরা জানত না । ওরা তাঁকে আর পাঁচটা সাধারণ বড়লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া মেয়ের মতো ভেবেই কিডন্যাপ করেছিল, পরে হয়তো মুক্তিপণ চাইতো বা বেচে দেওয়ার চেষ্টা করত । আমাকে বাজিয়ে দেখার জন্যই সেদিন টোটোতে সহযাত্রী হয়ে আলাপ জমিয়েছিলেন ।
কথা বলতে বলতে অনেক বেলা হয়ে গেল । সেই বয়স্ক ডাক্তারবাবু ফিরে এলেন, জানলাম তাঁর নাম ডাঃ সত্য রঞ্জন পাল । আমাকে একবার চেক-আপ করে বললেন, “মোটামুটি সব ঠিকই আছে, তবে আজকের দিনটা অবজারভেশনে রাখা ভাল । কাল সকালে আপনাদের রিলিজ করে দেব”। ডাঃ পালের সঙ্গে সঙ্গে সেনগুপ্ত সাহেব আর ঘোষ ম্যাডামও উঠে পড়লেন ।
যাওয়ার আগে ঘোষ ম্যাডাম বললেন, “ইউ ক্যান কল মি ঋষাণী”, একটু থেমে আবার “গেট ওয়েল সুন, সি ইউ ল্যাটার …”, বলে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন । করমর্দনের আছিলায় আমার হাতে একটা ছোট্ট চিরকুট গুঁজে দিতে একটু অবাকই হলাম । মুখ তুলে তাকাতেই একটা ফিচেল হাসি দিয়ে, চোখ টিপে, হাতের ইশারায় বললেন, ‘কল মি’ । সামনে এগিয়ে যাওয়ার দরুন সেনগুপ্ত সাহেব বা ডাঃ পাল, কারোর নজরেই এলো না ব্যাপারটা । আমিও কিছু না বলে ডান হাতে থাম্বস-আপ দেখালাম । সবাই চলে যাওয়ার পর দেখি চিরকুটে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেল আই.ডি., সব লেখা আছে । নিজের মোবাইলে সেভ করতে করতে ভাবলাম, ‘কথায় বলে, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা, এন.সি.বি. ছুঁলে ???’ – কথাটা মনে হতেই নিজের মনে একটু হেসে নিলাম ।

to be continued…

Chapter 8 (Coming soon, 27th April, 18)

Loading

One thought on “অপ্রত্যাশিত চিঠি – পর্ব ৭/৮

Leave A Comment